ঢাকা ( ২৯ অক্টোবর ) : আলোচনার শুরু দিন দশেক আগে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহারকারীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক তার নাম বদলাতে পারে বলে ১৯ অক্টোবর খবর দেয় দ্য ভার্জ। প্রযুক্তি বিষয়ক খবর প্রকাশের জন্য খ্যাত আন্তর্জাতিক ওই সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশের পরই এক ধরনের হইচই পড়ে যায়। প্রযুক্তি আর সামাজিক যোগাযোগের দুনিয়ায় আলোচনা চলতে থাকে, কী নামে আসতে পারে ফেসবুক? কেনই বা তাদের নাম পরিবর্তনের এই উদ্যোগ?
দ্য ভার্জ সেদিনের ওই প্রতিবেদনে ফেসবুকের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য হাজির করতে পারেনি। তবে নাম পরিবর্তনের ওই ‘প্রক্রিয়ায় জড়িত’ একজনের বরাত দিয়ে ফেসবুকের ওই উদ্যোগের বেশ কিছু কারণ জানায়।
ভার্জের ওই প্রতিবেদন থেকেই জানা যায়, ‘মেটাভার্স’ নামে পুরোপুরি ভার্চুয়াল দুনিয়ার যে ধারণা নিয়ে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ কাজ করছেন, সেখানে এগিয়ে থাকার লক্ষ্যেই নাম পরিবর্তনের এ উদ্যোগ। নাম পরিবর্তন করে ফেসবুক ইনকরপোরেশনের অধীনে থাকা ফেসবুক ছাড়াও হোয়াটস অ্যাপ, ইনস্টাগ্রামের মতো সবগুলো অ্যাপ বা সেবাকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার পরিকল্পনার কথা জানা যায়। তবে নতুন নাম কি হতে পারে তা নিয়ে সেদিন বিশেষ কিছুই জানা যায়নি।
দ্য ভার্জের ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই প্রযুক্তি দুনিয়ায় ফেসবুকের নতুন নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহে টুইটারে বুকফেস, ফেসগ্রাম, ফেক্টাগ্রাম, ফেসটক বা ওয়ার্ল্ডচেঞ্জারের মতো নামগুলো নিয়ে আলোচনা চলছিল।
এর সঙ্গেই আলোচনায় ছিল ফেসবুকের বিকল্প নাম ‘মেটা’। এ নামটিকে অনেক প্রযুক্তি বিশ্লেষক এগিয়েও রাখছিলেন। কারণ এ নামের সঙ্গে মার্ক জাকারবার্গের নতুন ব্যবসায়িক আইডিয়া মেটাভার্সের মিল পাওয়া যায়।
ভার্জের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৮ অক্টোবর ফেসবুকের বার্ষিক সম্মেলন ‘কানেক্ট’ অনুষ্ঠিত হবে। সেদিনই জাকারবার্গ নাম পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন। তবে তার আগেই ফেসবুকের পক্ষ থেকে নতুন নাম জানানো হতে পারে।
অবশেষে সব আলোচনা-গুঞ্জন শেষে করে সেই কানেক্টেই ফেসবুক সিইও জানালেন ফেসবুক ইনকরপোরেশনের নতুন নাম ‘মেটা’।
এখন প্রশ্ন হলো, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানটির নাম হঠাৎ কেন পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হলো?
এর প্রথম জবাব হলো- ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম বদলের ঘটনা নতুন নয়। যেমন এর আগে গুগল তাদের প্রধান প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে অ্যালফাবেট করে। গুগলের মালিকানায় থাকা ৬টি প্রতিষ্ঠান এখন ওই কোম্পানির অধীনে পরিচালিত হয়।
দ্বিতীয় যে কারণটি আলোচনায় ছিল এবং ফেসবুকও যেটি জানিয়েছে তা হলো- তাদের নতুন ব্যবসায়িক ধারণা মেটাভার্সকে প্রতিষ্ঠিত করা।
মেটাভার্স এমন একটি ধারণা যে, আপনি অফিস কিংবা ঘরে বসে আছেন, কিন্তু চাইলেই কল্পনায় চলে যেতে পারেন কোনো সমুদ্রে সৈকতে কিংবা অন্য কোথাও। মানুষের এই কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে দীর্ঘদিন ধরে অর্থ লগ্নি আর প্রচেষ্টা চলছে। এ কাজে ফেসবুক ছাড়াও গুগলসহ অন্যান্য প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর বড় অংকের বিনিয়োগ আছে। ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে মিশেল ঘটিয়ে মানুষকে তার বাস্তবের কাছাকাছি নিয়ে যেতেই কাজ করবে মেটাভার্স।
এ ধারণাকে প্রাধান্য দিয়েই নাম বদলালো ফেসবুক। প্রযুক্তি দুনিয়ার নয়া জায়ান্ট হিসেবে আবির্ভূত হলো ‘মেটা’।
নামকরণ নিয়ে জাকারবার্গ বলেন, ক্লাসিকস পড়তে বরাবরই ভালোবাসি। গ্রিক শব্দ ‘বিয়ন্ড’ (অনন্ত) থেকে এসেছে ‘মেটা’ শব্দটি। ব্যক্তিগতভাবে সে শব্দ বেছে নেওয়ার কারণ এই যে, আরও অনেক কিছু তৈরি করা বাকি। আমাদেরও পথচলার অনেক নতুন পথ বাকি, সেই ধারণা থেকেই এই নামকরণ।
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাতে নাম বদলের ঘোষণা যখন জানা যায়, তখন এও জানা যায় যে, ফেসবুকের নাম ঠিক থাকবে। শুধু তাদের মূল প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে হবে মেটা।
তবে নাম বদলের এ ঘোষণা যখন জাকারবার্গ দিলেন তার কিছু সময় পরেই ফেসবুকে থাকা তাদের নিজস্ব পেজ faceboo- এর নামই বদলে গিয়েছে। সেটি এখন Meta নামে দেখা যাচ্ছে।
তারা তাদের কাভার ফটোও পরিবর্তন করেছে। সেই সঙ্গে একটি বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মেটা এমন একটি ভবিষ্যৎ তৈরি করতে সাহায্য করছে যার মাধ্যমে মেটাভার্সে মানুষ আরও বেশি খেলার এবং সংযুক্ত হওয়ার উপায় পাবে। সামাজিক যোগাযোগের নতুন অধ্যায়ে স্বাগত।
ফলে ফেসবুক আসলেই কী করতে চাইছে তা হয়তো ফেসবুক সিইও জাকারবার্গই সবচেয়ে ভালো জানেন।