বিশ্ববাজারে রেকর্ড পরিমাণ দাম কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পাম অয়েল উৎপাদানকারী দেশ মালয়েশিয়াতে বর্তমানে প্রতি টন পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬৯০ রিঙ্গিতে। যা বাংলাদেশি টাকায় ৭৭৮৫৯ টাকা। যা মে মাসে বুকিং হয়েছে ৭ হাজার ৫০০ রিঙ্গিতে। যা বাংলাদেশি টাকায় ১৫৮২৫০ টাকা।
আন্তর্জাতিক বুকিং দর ও খরচ (পরিবহন ও পরিশোধন) যোগ করে বর্তমানে দেশে প্রতি মণ পাম অয়েলের দাম পড়ে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৮০০ টাকা। কিন্তু মিল পর্যায়ে প্রতি মণ পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৮০০ টাকা। যা পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৫০০ টাকায়। অর্থাৎ আমদানিকারক (কারখানা মালিকরা) প্রতি মণ পাম অয়েলে মুনাফা করছে ১ হাজার টাকা।
গত ২৮ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিলে দুই দিনের মধ্যেই অস্থির হয়ে উঠে দেশের ভোজ্যতেলের বাজার। ওই সময় মাত্র দুই দিনেই ভোজ্যতেলের দাম মণে (৪০ দশমিক ৯০ লিটার) ৮০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
ঘোষণার দিন ২৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে মাত্র ৬ হাজার ২০০ টাকায়। দুই দিনে দাম বেড়ে (১ মে) একই পাম অয়েলের দাম ঠেকে ৭ হাজার টাকায়। ২৮ এপ্রিল প্রতি মণ সয়াবিন ৬ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হলেও ১ মে তা বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ৫০০ টাকায়।
আন্তর্জাতিক বাজার দর অনুযায়ী, গত চার মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মণ পাম অয়েলের দাম কমেছে ৩ হাজার ৫০০ টাকার উপরে। তবে, কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, গত ৭ থেকে ১০ দিনে ২০৪ লিটার প্রতি ড্রাম পাম অয়েলের দাম কমেছে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা । বর্তমানে প্রতি লিটার পাম অয়েল ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এই বিষয়ে টিআইবি চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি অ্যাডভোকেট আক্তার কবির চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ববাজারে বুকিং দর বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশীয় বাজারে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয় আমদানিকারকরা। একই সঙ্গে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম সমন্বয় করতে সরকারি তদারকি সংস্থাগুলোকে চাপ সৃষ্টি করে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু বিশ্ববাজারে গত চার মাস ধরে পণ্যটির দাম কমলেও দেশীয় বাজারে সেই পরিমাণে দাম কমায় নি। প্রতি মণ পাম অয়েলের দাম ১ হাজার টাকার বাড়তি মুনাফা করে ভোক্তাদের পকেট কাটছে কোম্পানিগুলো।’
এই বিষয়ে সিটি গ্রুপের উপমহাব্যবস্থাপক প্রদীপ কারন বলেন, ‘বিশ্ববাজারে দাম কমে যাওয়ায় পাইকারি বাজারে পণ্যটির চাহিদা কিছুটা কমে গেছে। বাজারে বর্তমানে যেসব পণ্য রয়েছে তা আগের বেশি দামে কেনা। ফলে চাহিদা কমলেও আমদানিকারকরা পণ্যটির দাম কমাতে পারছে না। তবে বর্তমানে যে দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে তা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ের কম।’
আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় প্রতিদিনই কমছে ভোজ্যতেলের দাম। মাত্র দশ দিনেই আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন পাম অয়েলের দাম কমেছে ৬০০ রিঙ্গিতের বেশি। যা বাংলাদেশি টাকায় ১২৬৬০ টাকার বেশি। যা গত চার মাসে কমেছে ৩ হাজার ৮০০ রিঙ্গিত। যা বাংলাদেশি টাকায় ১৬৮৮০ টাকা।
এমপিওসি ডট ওআরজি ডট মাই এর তথ্যমতে, আন্তর্জাতিক বাজারে গত ৮ সেপ্টেম্বর অপরিশোধিত পাম অয়েল বুকিং হয়েছে ৩ হাজার ৬৯০ রিঙ্গিতে। যা বাংলাদেশি টাকায় ৭৭৮৫৯ টাকা। মাত্র দশদিন আগেও (২৪ আগস্ট) পাম অয়েলের বুকিং ছিল ৪ হাজার ৩০৮ রিঙ্গিত। যা বাংলাদেশি টাকায় ১৭৫২৯৮ দশমিক ৮ টাকা। সেই হিসেবে, দশদিনে বিশ্ববাজারে পাম অয়েলের বুকিং দর ৬১৮ রিঙ্গিত কমে গেছে। যা বাংলাদেশি টাকায় ১৩০৩৯ দশমিক ৮ টাকা।
পাম অয়েল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গেল মার্চ-এপ্রিলে রেকর্ড দামে বিক্রির পর আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে পাম অয়েলের বাজার। এখন প্রতিদিনই কমছে পণ্যটির দাম। কিন্তু দেশীয় বাজারে পাম অয়েলের দাম তেমন কমেনি।
ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে বৃহস্পতিবার প্রতি মণ (৪০ দশমিক ৯০ লিটার) পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৫০০ টাকা ও সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার টাকা দামে।
দ্য চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘ভোজ্যতেলসহ যেকোনো পণ্যের দাম টানা উত্থানের পর কমে স্থিতিশীলতায় ফিরবে। এটাই বাজারের স্বাভাবিক নিয়ম। বিশ্ববাজারে কমে আসায় দেশীয় আমদানিকারকদেরও উচিত পণ্যটির দাম কমিয়ে আনা। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোকে সতর্কতার সাথে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে দেশীয় বাজারে দাম সমন্বয় করতে হবে। কারণ বিশ্ববাজারে বর্তমান দরপতনও আমদানিকারকদের বড় ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।’