জুলাই ২, ২০২৫ ৮:৫৭ পূর্বাহ্ণ

সিংহ গুহায় ঘুমিয়ে ২৮ হাজার বছর!

সিংহ, ঘুম,
সিংহ গুহায় ঘুমিয়ে ২৮ হাজার বছর। ছবি: সুংগৃহীত

দেখলে মনে হবে যেন চুপ করে ঘুমিয়ে আছে। ছুঁলেই জেগে উঠবে! গায়ের সোনালি লোম কাদায় মাখামাখি, কিন্তু কোথাও পচন বা ক্ষয়ের চিহ্ন নেই। কে বলবে, ওর বয়স ২৮,০০০ বছর! নখ এখনো এতটাই তীক্ষ্ণ যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে গিয়ে তা বিঁধে গেল গবেষকের আঙুলে। কিন্তু তাতে নজর দেওয়ার সময় কোথায়?

২০১৮ সালে সাইবেরিয়ার এক গুহায় যখন সিংহশাবকটির সন্ধান মিলেছিল, তখন বিজ্ঞানীরা অভিভূত! তুষারযুগের এমন অক্ষত মমি আর একটিও পাননি তারা। তুষারযুগের সবচেয়ে অক্ষত ভাবে সংরক্ষিত, গুহা  । সম্প্রতি যার বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮,০০০ বছর!

বিজ্ঞানীরা ভালোবেসে এর নাম দিয়েছেন স্পার্টা। ২০১৭ সালে এই গুহাতেই মিলেছিল আর একটি সিংহশাবকের সন্ধান। রাশিয়ার সেমুলেখ নদীর ধারে ওই গুহায় মাত্র ৪৯ ফুটের ব্যবধানে দু’টি গুহা সিংহের মমি পেয়ে বিজ্ঞানীরা প্রথমে ভেবেছিলেন, এরা বোধহয় একই মায়ের সন্তান। কিন্তু রেডিয়ো কার্বন ডেটিং বুঝিয়ে দিল, এদের বয়সের পার্থক্য প্রায় ১৫ হাজার বছর!

২০১৭ সালে পাওয়া বরিসের বয়স প্রায় ৪৩,৪৪৮ বছর! তবে, বরিসের চেয়ে স্পার্টার মমির অবস্থা অনেক ভালো। স্পার্টার দাঁত, নখ, চামড়া অক্ষত। সফট টিস্যু আর অঙ্গগুলো মমি হয়ে গেলেও এতটুকু পচন ধরেনি। এমনকি কাদায় মাখা লোমও একদম অক্ষত!

স্টকহোম প্যালিওজেনেটিক্স সেন্টারের অধ্যাপক লাভ ডালেনের কথায়, স্পার্টাই সম্ভবত সবচেয়ে ভালো ভাবে সংরক্ষিত তুষারযুগের প্রাণী। ওর দেহাংশ তো বটেই, গোঁফও অটুট। বরিসের জীবাশ্মে কিছুটা পচন ধরেছিল, তবে সেটার অবস্থাও খুব খারাপ ছিল না।

বিজ্ঞানীদের মরে, দু’টি সিংহশাবকেরই বয়স ১-২ মাসের আশেপাশে। তবে, কী ভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। শরীরে কোথাও কোনো ক্ষতচিহ্ন নেই, তাই কোনও শিকারি প্রাণীর হাতে তাদের নিহত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

ডালেনের মতে, ‘এদের দেহ যে ভাবে সংরক্ষিত হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে এরা বরফের স্তূপে চাপা পড়েছে। সেক্ষেত্রে মাটি ধ্বসে মৃত্যুর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। হয়তো মাটি ধ্বসে ভেসে হিমবাহের ক্রিভাসে বা খাঁজে আটকে গিয়েছিল, আর তাই দেহ একেবারেই অক্ষত!

বস্তুত, তুষারযুগে সাইবেরিয়ার এই অংশে ঘুরে বেড়াতো ম্যামথ, তুন্দ্রা নেকড়ে, ভালুক, লোমশ গন্ডার, বাইসনরা। সেই সঙ্গে ছিল কেভ লায়ন বা গুহা সিংহরা, এখনকার আফ্রিকান সিংহদের থেকে আকারে সামান্য বড়। কিন্তু সাইবেরিয়ার প্রবল ঠাণ্ডায় তারা কিভাবে থাকতো সেটি বিজ্ঞানীদের কাছে এখনও একটা বিশ্বয়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, গুহা-সিংহের লোম আফ্রিকার সিংহদের মতো হলেও তুষারযুগের এই সিংহদের লোমের নীচে আরও একটা লোমের আস্তরণ বা আন্ডারকোট হাকতো, আর সেটাই সম্ভবত তাদের ঠাণ্ডা থেকে সুরক্ষিত রাখতো।

রাশিয়ার এই অঞ্চলে বরফ গলার মরসুম শুরু হলেই দলে দলে বেরিয়ে পড়েন স্থানীয়রা। না, ছুটি কাটাতে নয়। হিমবাহের খাঁজে বা বরফের মাঝে এমন জীবাশ্মের খোঁজে! বিশেষ করে ম্যামথের দাঁত পেলে তো কথাই নেই! হাতির দাঁতের থেকেও বেশি দামে বিক্রি হয় সেটি। এমনই একটি টাস্ক-হান্টারের দলে যোগ দিয়েছিলেন রুশ বিজ্ঞানী ভ্যালেরি প্লটনিকোভ।

ভ্যালিরির কথায়, ওদের সঙ্গে ছোট্ট ছোট্ট গুহায় ঘুরেছি। প্রবল ঠাণ্ডা, তার উপর যে কোনো সময় ধ্বস নামার বিপদ! কিন্তু তার মধ্যেও কাজ করে দু’টি সিংহ-শাবক, একটি নেকড়ের মাথা আর ম্যামথের একটি গোটা পরিবারের মমি পাওয়া কি কম প্রাপ্তি?

আপাতত চলছে স্পার্টা আর বরিসের লিঙ্গ নির্ধারণ প্রক্রিয়া, তার পর হবে ডিএনএ সিকোয়েন্সিং। গুহা সিংহের বিবর্তনের ইতিহাসে বরিস আর স্পার্টা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাবে বলেই মনে করছেন গবেষকরা।

 

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Email
Print

সম্পর্কিত

ওমিক্রন, ভ্যারিয়েন্ট, ধারণা, স্বাস্থ্য সংস্থা, ভ্যারিয়েন্টে গুলোকে

‘ওমিক্রনে’ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যাদের

ঢাকা (১৫ ডিসেম্বর): করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’ দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বে। এরই মধ্যেই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বের ৭৭টি দেশে ছড়িয়েছে। তবে বিশ্বের...