ঢাকা(১৯ মে):স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প’অর্জনে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্লেন্ডেড শিক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়নে সরকারি, বেসরকারি, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসহ সকলকে একযোগে কাজ করার বিকল্প নেই। এলক্ষ্যে বিভিন্ন খাতের অংশীজনদের নিয়ে গত ১৬মে (মঙ্গলবার) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘এক্সেলারেটিং ব্লেন্ডেড এডুকেশন ফর স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক কনসালটেশন এর আয়োজন করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্দোগে, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ও এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই এরসহযোগিতায় আয়োজিত এই ইন্টারন্যাশনাল কনসালটেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহম্মেদ পলক, এমপি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীএমপি।
২০২২ সালে সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিকসাধারণ সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বাংলাদেশ সরকারের ন্যাশনাল ব্লেন্ডেড এডুকেশনাল মাস্টার প্ল্যান (২০২২-২০৩১) তুলে ধরেন এবংসেখানে বাংলাদেশে একটি এডুকেশন এক্সিলারেটর গঠনের কথা ঘোষণা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আইসিটি বিভাগে এবং বিভিন্ন বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে একটি এক্সিলারেটর গঠন করা হয়। এডুকেশন এক্সিলারেটর এর চারজন কো-চেয়ার হলেন– শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহ্মেদ পলক, এমপি, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক জনাব আসিফ সালেহ এবং মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারপার্সন জনাব রুবানা হক।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব জনাব সোলেমান খান। অনুষ্ঠানের মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এর এডুকেশন, স্কিল অ্যান্ড লার্নিং বিভাগের লিড জনাব তানিয়া মিলবার্গ এবং এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর জনাব আনীর চৌধুরী।
এসময় দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্লেন্ডেড শিক্ষা উপযোগী করে তুলতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা ও প্রয়োজনীয়তার ওপরে একটি প্যানেল আলোচনা হয়। প্যানেলিস্ট হিসেবে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব মোঃ কামাল হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব জনাব সোলেমান খান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব জনাব মোঃ সামসুল আরেফিন, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) জনাব নাসরীন আফরোজ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব ফরিদ আহাম্মদ, এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এর এডুকেশন, স্কিল অ্যান্ড লার্নিং বিভাগের লিড জনাব তানিয়া মিলবার্গ। প্যানেল আলোচনার মডারেটর ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উইংয়ের পরিচালক জনাব প্রফেসর ড. একিউএম শফিউল আজম।
বিগত এক দশকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশরূপকল্প বাস্তবায়নের শিক্ষায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকহারে প্রসারলাভ করে। কোভিড সময়ে পুরো বিশ্বের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও তা মোকাবেলায় দেশের যথেষ্ট ছিল। এসময় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জাতীয়ভাবে সংসদ বাংলাদেশটেলিভিশন, বাংলাদেশ রেডিও ও অনলাইনসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখা হয়।কোভিড পরবতী সময়ে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে অনলাইন-অফলাইন মিশ্রণে ব্লেন্ডেড শিক্ষার পদ্ধতির নীতি প্রণয়নের উদ্দোগ নেয় সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণলায়ের নেতৃত্বে মোট ১৩টি মন্ত্রণালয় কাজ করছে ব্লেন্ডেড শিক্ষা ও দক্ষতা মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে।
শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দিতে শুধু গতানুগতিকপড়াশোনা দিয়ে শিক্ষার নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। নতুনসময়ে শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে সবাইকে একযোগে কাজ করতেহবে। শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্লেন্ডেড করা এই পরিবর্তনের একটি অংশ কিন্তু এইপরিবর্তনের যাত্রায় সবাইকে একত্রে কাজ করা। সবার সমিলিতপ্রচেষ্টার মাধ্যমে স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণেরপথ সুগম করা উদ্দেশ্য আমাদের। সেজন্য সবাইকে এই মিশন–ভিশনকেবিশ্বাস করে কাজ এগিয়ে নিতে হবে।’
‘কোভিড অপ্রত্যাশিত হলেও, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ট্রান্সফর্ম করারসুযোগ করে দিয়েছে। এর ফলে আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি যা আমাদেরভবিষ্যতের স্বপ্নপূরণে সহায়তা করবে। আমরা স্বপ্নপূরণের পথেই রয়েছি।এলক্ষ্যে আমরা অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চাই যেখানে সকলশিক্ষক আর শিক্ষার্থীরা মানসম্মত প্রযুক্তি ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে শিখনও শেখানো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে। আমরা দক্ষতা উন্নয়নেরসমাধানের দিকে হাঁটছি যার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা নিজে অর্থ উপার্জনকরে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অংশীদার হবে। এই স্বপ্নযাত্রায় ব্লেন্ডেডশিক্ষাব্যবস্থার মাস্টারপ্ল্যান আমাদের একটি পদক্ষেপ। এই স্বপ্নপূরণেসরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও ও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিকফোরামের মতো গ্লোবাল লিডার্সদের একযোগে কাজ করতে হবে।’-যোগ করেন তিনি।
‘পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ডিজিটালি করে গড়ে তোলাকে গুরুত্ব দিতে হবে। এইসাথে ডিজিটাল লিডারশিপ একাডেমি (ডিএলএ) কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। দ্য ইস্টাবিলিশিং ডিজিটাল কানেকটেভিটি (ইডিসি) প্রজেক্ট ১ লক্ষ ৯ হাজার মাইল উচ্চ গতি সম্পন্ন ব্রডব্যান্ড সংযোগ প্রদান করছি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২৭ শতাধিক কলেজকে আওতায় নিবে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ডিজিটাল করার লক্ষ্যে ইতো মধ্যে আমরা ১৩ হাজারের বেশি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবস, ৩ শতাধিক ‘স্কুল অফ ফিউচার’ নির্মাণ করেছি।শিগগিরই উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার বইগুলোকে ডিজিটালাইজড করার উদ্দেগ নিচ্ছি।উদ্ভাবনকে প্রচার, অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিনিয়োগ এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত করতে আমাদের পলিসি আরও এগিয়ে নেয়া হবে।’
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাস্তবায়নাধীন ও ইউএনডিপি’র সহায়তায় পরিচালিত এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই বাংলাদেশে স্মার্ট বলেন শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি ও উন্নয়ন সহযোগীদের নিয়ে একতরে বিভিন্নউদ্ভাবনী কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।
এছাড়াও এসময় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ওস্তাপ লুতসিশিন, এবং এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জনাব ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীরসহ সরকারি-বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।