নভেম্বর ২১, ২০২৪ ৬:১৩ অপরাহ্ণ

স্বর্ণের দাম কেনো বাড়ছে?

স্বর্ণের ভরি এখন বাংলাদেশে ৮৪ হাজার ৫৬৪ টাকা। স্বর্ণের দামে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন রেকর্ড। দাম বেড়েছে বিশ্বব্যাপীই। স্বর্ণের দামের সাথে বিশ্ব অর্থনীতির একটি গভীর সম্পর্ক আছে। বিশ্ব অর্থনীতি এখন কেমন আছে, এর উত্তর একটাই—‘অনিশ্চয়তা’। আগামী দিনগুলোতেও এই অনিশ্চয়তা এবং ঝুঁকি থাকবে বলেই বিশেষজ্ঞরা বলছেন। কোভিড–১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

অনিশ্চয়তাই অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। কিন্তু অনিশ্চয়তার সময়টাই আসলে সোনার স্বর্ণসময়। যত বেশি অনিশ্চয়তা, তত বেশি সোনা বিক্রি। যত বেশি মূল্যস্ফীতি, তত বেশি সোনার দাম বৃদ্ধি। ঐতিহাসিকভাবেও দেখা গেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়েই সোনার দাম সবচেয়ে বেশি ।

অন্যান্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সুবিধা কমে যাওয়া এবং অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে মানুষ নিরাপদ বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছে।

স্বর্ণের ভরি এখন বাংলাদেশে ৮৪ হাজার ৫৬৪ টাকা। স্বর্ণের দামে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন রেকর্ড। দাম বেড়েছে বিশ্বব্যাপীই।
স্বর্ণের ভরি এখন বাংলাদেশে ৮৪ হাজার ৫৬৪ টাকা। স্বর্ণের দামে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন রেকর্ড। দাম বেড়েছে বিশ্বব্যাপীই।

সোনা মূলত আর্থিক সম্পদ

চার কারণে সোনার প্রতি এত আগ্রহ। যেমন, সোনা দুষ্প্রাপ্য, এর উপযোগিতা বেশি, রয়েছে সৌন্দর্য এবং ধাতুটি কোনোভাবেই নষ্ট হয় না। বরং সোনা গলিয়ে ইচ্ছামতো আকার দেওয়া যায়, আবার ফিরিয়ে আনা যায় আগের অবস্থানে।

অর্থনীতি, ব্যাংকব্যবস্থা ও বিনিময় হারের সঙ্গেও সোনার রয়েছে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। আজকের অর্থব্যবস্থায় সোনার ভূমিকা আর আগের মতো সরাসরি নেই। সাবেক ব্যাংকার সৈয়দ আশরাফ আলী ফরেন এক্সচেঞ্জ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অর্থায়ন বইতে লিখেছেন, মূলত ১৮৮০ থেকে ১৯১৪ সাল হলো গোল্ড স্ট্যান্ডার্ডের স্বর্ণযুগ। এ ব্যবস্থায় অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলো তাদের মুদ্রার মান নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ হিসেবে প্রকাশ করত।

এ ব্যবস্থায় চাইলেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক নোট ছাপাতে পারত না। গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড ব্যবস্থায় দেশগুলো তাদের দেশীয় মুদ্রার মূল্য কী পরিমাণ স্বর্ণের সমান হবে তা আইন করে বেঁধে দিয়েছিল। মুদ্রাব্যবস্থায় এর পরের ধাপ হচ্ছে গোল্ড বুলিয়ান স্ট্যান্ডার্ড। ব্রিটেনে ১৯২৫ সালে এর উদ্ভব ঘটেছিল। এ ব্যবস্থায় চালু নোটের বিপরীতে পুরোপুরি সোনার রিজার্ভ রাখার বিধান উঠিয়ে নেওয়া হয়। এ ব্যবস্থা টিকে ছিল ১৯৩১ সাল পর্যন্ত।

আর্থিক ব্যবস্থায় সোনার গুরুত্ব কমলেও সোনার স্বর্ণযুগ কিন্তু রয়েই গেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এখনো বিভিন্ন দেশের রিজার্ভের হিসাব তৈরির সময় সোনা মজুতের হিসাবটি বিবেচনায় রাখে। আবার অনিশ্চয়তার সময় সোনার গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায় বলেই আলোচনায় বারবারই চলে আসে এই স্বর্ণালী দামি ধাতুটি।

কেন সোনার দাম বাড়ে-কমে

আর সব পণ্যের মতো সোনার দরও ঠিক হয় সরবরাহ ও চাহিদার ওপর। সরবরাহ আসে দুই ভাবে। নতুন উত্তোলন এবং পুরোনো সোনা বিক্রি। স্বর্ণখনিতে সোনা উত্তোলন একটি চলমান প্রক্রিয়া। সাধারণত প্রতিবছর কত পরিমাণ সোনা উত্তোলন হবে, তার একটা হিসাব পাওয়া যায়। এই হিসাবে খুব একটা ওঠানামাও করে না। যেমন মহামারির বছর ২০২০ সালেও সোনা উত্তোলন হয়েছিল আগের বছরগুলোর মতোই, ৩ হাজার ৪৭৬ টন। তবে সাধারণত সোনার সরবরাহ বাড়ে মূল্যবৃদ্ধির সময়টাতেই। দাম বাড়লে অনেকেই হাতে থাকা সোনা বেশি মুনাফার আশায় বিক্রি করে দেন, অনেকে আবার জীবনযাত্রার বাড়তি ব্যয় মেটাতেও সোনা বিক্রি করেন।

সোনার চাহিদাও তৈরি হয় দুভাবে। যেমন গয়নার চাহিদা এবং সোনায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি। গয়না হিসেবে সোনার বেশি প্রচলন চীন ও ভারতে। পশ্চিমা দেশগুলোয়ও গয়নার ভালো চাহিদা আছে। আন্তর্জাতিক গোল্ড কাউন্সিলের হিসাবে, সরবরাহকৃত মোট সোনার ৪৭ শতাংশই ব্যবহার করা হয় গয়নায়, এর পরিমাণ ২ হাজার ২৩০ টন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারতে এখনো সোনা বিক্রির মৌসুম শুরু হয়নি। সাধারণত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বড় কোনো উৎসব থাকে না। এটি বিয়ের মৌসুমও নয়। এই মৌসুম শুরু হবে নভেম্বর থেকে। সে সময়েই সোনার চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে।

এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে সোনায় বিনিয়োগ করার জন্য বন্ডসহ নানা ধরনের আর্থিক সম্পদ আছে। অনিশ্চয়তার সময় এই খাতে বিনিয়োগ বাড়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও ভবিষ্যতের জন্য সোনার মজুত বাড়িয়ে দেয়। হিসাব অনুযায়ী, সোনার বার ও সোনার মুদ্রায় বিনিয়োগের পরিমাণ ১ হাজার টন। মোট সরবরাহের ২১ শতাংশই বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে সোনার ব্যবহার হয়ে থাকে।

দাম বাড়ছে বাংলাদেশেও

দেশের বাজারে এখন সোনার মূল্যবৃদ্ধি নিয়মিত ঘটনা হয়ে গেছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) সর্বশেষ সোনার দাম বাড়িয়েছে গত রোববার। ফলে এখন হলমার্ক করা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম দাঁড়িয়েছে ৮৪ হাজার ৫৬৪ টাকা। এ ছাড়া হলমার্ক করা ২১ ক্যারেট সোনার ভরি ৮০ হাজার ৭১৫ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৬৯ হাজার ১৬৮ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির সোনার ভরির দাম ঠিক করা হয়েছে ৫৭ হাজার ৩৮৭ টাকায়।

২০২১ সালে স্বর্ণের ২২ ক্যারেটের ১ ভরি সোনার অলংকার কিনতে ব্যয় হবে ৭১ হাজার ৯৬৭ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেট ৬৮ হাজার ৮১৮ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৬০ হাজার ৭০ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির সোনার অলংকারের ভরি বিক্রি হবে ৪৯ হাজার ৭৪৭ টাকায়।

গত ১ বছরে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ২২ ক্যারেটে ১২৫৯৭ টাকা ,২১ ক্যারেটে ১১৮৯৭ টাকা ,১৮ ক্যারেটে ৯০৯৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতিতে ৭৬৪০ টাকা ।

বাংলাদেশের সোনার চাহিদা কত, এ নিয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য নেই। স্বর্ণ নীতিমালায় বলা আছে, দেশে প্রতিবছর ২০ থেকে ৪০ মেট্রিক টন সোনার চাহিদা তৈরি হচ্ছে।

আবার বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি বলছে, প্রতিবছর সোনা চোরাচালানের আর্থিক পরিমাণ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। মূলত সোনা চোরাচালানের অর্থ লেনদেন হয় হুন্ডিতে।

আবার গয়না বানানো ছাড়া দেশে সোনার তেমন কোনো চাহিদাও নেই। অন্যান্য দেশের মতোসোনায় বিনিয়োগ করার মতো কোনো বন্ড বা আর্থিক উপাদানও গড়ে ওঠেনি। ফলে গয়না বানানো বা সোনার বার কিনে রাখাই এখন একমাত্র বিনিয়োগ। অথচ সোনায় বিনিময়যোগ্য আর্থিক কোনো উপাদান থাকলে তাতে দেশই লাভবান হতে পারত, যা পাশের দেশ ভারতেও রয়েছে।

 

 

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Email
Print

সম্পর্কিত

৭ম বাংলাদেশ মার্কেটিং-ডে অনুষ্ঠিত

৭ম বাংলাদেশ মার্কেটিং-ডে অনুষ্ঠিত

ঢাকা(১৯ অক্টোবর): ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ৭ম বাংলাদেশ মার্কেটিং-ডে। গতকাল ১৮ অক্টোবর ঢাকায় সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বর্ণাঢ্য আয়োজনের...

ওসমানী বিমানবন্দরে ১০৫ পিস স্বর্ণের বারসহ যুবক আটক

ওসমানী বিমানবন্দরে ১০৫ পিস স্বর্ণের বারসহ যুবক আটক

ঢাকা(২৮ আগষ্ট): সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১৫০ পিস স্বর্ণের বারসহ একজনকে আটক করেছে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও শুল্ক গোয়েন্দা।...

আজ শেষ হচ্ছে বাজুস ফেয়ার-২০২৪

আজ শেষ হচ্ছে বাজুস ফেয়ার-২০২৪

ঢাকা(১০ ফেব্রুয়ারি): সারাদেশের প্রায় ৪০ হাজার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন- বাজুস। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন-২০৪১ সফল...