ঢাকা (১৮ সেপ্টেম্বর) : গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় দায়ের করা মামলায় গত বৃহস্পতিবার ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেফতার করা হয়। প্রধান কর্তাদের অনুপস্থিতেই বন্ধ হতে চলছে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম। ইতোমধ্যে সেলারদের রেগুলার বিল দিতে না পারায় ‘ইভ্যালি টি-টেন’ অফারের অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
আজ শনিবার রাত ১টা ১৮ মিনিটে ইভ্যালির ফেসবুক পেজে এক জরুরি নোটিশে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নোটিশে ইভ্যালি জানায়, ‘১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১-এর টি-টেন-এ আপনাদের রেসপন্সে আমরা অভিভূত। আমাদের পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের প্রধান দুজন সিগনেটরি- সিইও এবং চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে, আমাদের সেলারদের রেগুলার বিল দিতে পারছি না। এজন্য আমাদের স্বাভাবিক ডেলিভারি কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে। তাই আপনাদের করা ১৭ সেপ্টেম্বরের টি-টেন-এর সব অর্ডার আপাতত রিকোয়েস্ট হিসেবে জমা থাকবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া মাত্রই আপনাদের টি-টেন-এর সব অর্ডার কনফার্ম করা হবে। অর্ডার কনফার্ম হলেই আপনারা পেমেন্ট সম্পন্ন করতে পারবেন।’
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ইভ্যালির সিইও ও চেয়ারম্যান গ্রেফতারের পরদিন শুক্রবার ইভ্যালির ফেসবুক পেজে নতুন ‘ইভ্যালি টি-টেন’ নামে অফার ঘোষণা করা হয়। এ অফারের অধীনে মাম পানি, স্মার্ট টিভি, এয়ার কন্ডিশনার, স্যামসাং গ্যালাক্সি ট্যাব এস৬, আখতার ফার্নিচারের সোফা, বৈদ্যুতিক ফ্যান, মসলিন সালোয়ার কামিজ, হ্যান্ডওয়াশ, বাইকসহ নানা পণ্যের বিজ্ঞাপন দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
অফারে বলা হয়েছে, মাত্র ১০ শতাংশ মূল্য অগ্রিম পরিশোধে ১০ কার্যদিবসে পাওয়া যাবে পণ্য। ১০ শতাংশ অগ্রিম টাকা নিয়ে আবেদন করার পর কনফার্মেশন ম্যাসেজ পেলেই পণ্যের পুরো টাকা পরিশোধ করতে হবে। পুরো টাকা পরিশোধ করার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হবে।
ফেসবুকে ‘ইভ্যালি টি-টেন’ অফারের পোস্টে প্রতারণা নিয়ে নানা মন্তব্য করেছেন গ্রাহকরা। অনেকে তাদের পণ্য চেয়ে মন্তব্য করেছেন। ধ্রুব সরকার নামে এক গ্রাহক মন্তব্য করেছেন, ‘এই পানি যে অর্ডার দেবে, সে পিপাসায় মারা যাবে।’ ইমরান হোসেন রাব্বি রাজ নামের একজন লিখেছেন, ‘ইভ্যালির সিইও গ্রেফতার হওয়ার পরও কোন পাগল অর্ডার দেবে’। রাসেল আহমেদ নামে এক গ্রাহক মন্তব্য করেন, ‘৫ জুনের অর্ডার ছিল, এখনো আপডেট নেই।’
মোবাইল, টিভি, এসি, মোটরবাইক, গাড়িসহ নানা পণ্যে মূল্যছাড়ে আকর্ষণীয় অফার দিয়ে গ্রাহকদের ‘প্রলুব্ধ করে’ ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলের লক্ষ্য ছিল, ‘গ্রাহকদের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া’। গ্রেফতারের পর এমনটিই জানিয়েছে র্যাব।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় একটি মামলা হয়। আরিফ বাকের নামে ইভ্যালির এক গ্রাহক মামলাটি দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর বিকেলেই রাসেলকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে তাদের র্যাব সদরদফতর নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পরে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাসেল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ইভ্যালির গ্রাহক সংখ্যা ৪৪ লাখেরও বেশি। শিশুদের নানা পণ্যের ব্যবসা ছেড়ে সামান্য পুঁজি নিয়ে রাসেল ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করেন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইভ্যালির দায় ছিল ৪০৩ কোটি টাকা, যেখানে তাদের সম্পদ ছিল ৬৫ কোটি টাকা। বিভিন্ন সংস্থার এসব প্রতিবেদনের বিষয়ে গ্রেফতার রাসেল র্যাবকে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম ইভ্যালির সিইও ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন।