ঢাকা (২৯ সেপ্টেম্বর) অক্টোবরের মাঝামাঝি সব কারখানা পর্যবেক্ষণ শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। ওই সময় কারখানা পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমে সব ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।
আজ বুধবার এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত সব শিল্প কারখানা পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন পদ্ধতি ও চেকলিস্টের ওপর ব্রিফিংয়ে এ আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রচারিত ভিডিও বার্তায় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, কারখানার নিরাপত্তাজনিত বিষয়ে অনেকগুলো সংস্থার কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হয়।
বাংলাদেশ ইনভেস্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) সেফটি সেল স্থাপনের মাধ্যমে ওয়ান স্টপ সার্ভিস পেলে উদ্যোক্তাদের হয়রানি কমার পাশাপাশি নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা সহজ হবে। এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, এর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে দেশের শিল্পখাত উপকৃত হবে।
এ সময় এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, সংস্কার কার্যক্রমে কিছুটা অর্থ ব্যয় হলেও, তার সুফল পাচ্ছে দেশের রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্প। দেশের অন্য শিল্পখাতকেও নিরাপদ করতে বিডার সঙ্গে এই উদ্যোগে যৌথভাবে কাজ করছে এফবিসিসিআই। তিনি বলেন, কারখানায় দুর্ঘটনা হলেই মালিকদের দোষারোপ করা হয়।
কিন্তু এসব ক্ষেত্রে যেসব সংস্থা লাইসেন্স দিয়ে থাকে তাদেরকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। নিমতলীর অগ্নিদুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, আলাদা কেমিক্যাল পল্লী গঠিত হলে, চুড়িহাট্টায় আগুনের দুর্ঘটনা ঘটতো না।
পোশাকশিল্পের মতোই অন্য খাতগুলোকেও নিরাপদ করে তুলতে দেশব্যাপী পরিদর্শন কার্যক্রমে এফবিসিসিআই’র সদস্যভুক্ত ৮০টি চেম্বার ও ৪০৬টি অ্যাসোসিয়েশন সক্রিয়ভাবে অংশ নেবে বলে জানান মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
এ সময় তিনি কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানিতে রপ্তানিমুখী শিল্পের সঙ্গে অন্য শিল্পের শুল্ক বৈষম্য দূর করতে এফবিসিসিআই উদ্যোগ নেবে বলে আশ্বাস দেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি এম এ মোমেন।
তিনি বলেন, পরিদর্শনের চেকলিস্ট দেখে উদ্যোক্তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। শিল্প মালিকদের সহায়তা করার জন্যই এই উদ্যোগে অংশীদার হয়েছে এফবিসিসিআই। এই পদক্ষেপ সফল হলে তৈরি পোশাকের মতোই দেশের সব শিল্প নিরাপদ হবে। যা বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম বাড়াবে, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সহায়ক হবে।
দেশের শিল্পায়ন অগ্রগতি অনেকটা অনানুষ্ঠানিকভাবে হয়েছে উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, এখন সব শিল্পে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার সময় এসেছে।
সমন্বিত পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমে যেসব কারখানার কর্মপরিবেশের মান সন্তোষজনক হবে, তাদেরকে আলাদা সনদ দেওয়ার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মো. হাবীব উল্লাহ ডন।
অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ মাহফুজুল হক ‘পরিদর্শন’ শব্দের পরিবর্তে ‘জরিপ’ অথবা ‘পর্যবেক্ষণ’ ব্যবহার করলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভীতি কমে আসবে বলে মন্তব্য করেন।
এর আগে অনুষ্ঠানে অনলাইনে অংশ নিয়ে বিডার নির্বাহী সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী উদ্যোক্তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, এই পরিদর্শন কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা। কোনোভাবেই কাউকে হয়রানি করা হবে না।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জুলফিকার রহমান বলেন, এই কর্মসূচির মাধ্যমে কোনো ব্যবসায়ীকে ধরা হবে না। বরং পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে কারখানাগুলোকে নিরাপদ করতে উদ্যোক্তা, অ্যাসোসিয়েশন এবং সরকারি পর্যায়ে খাতভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
অনুষ্ঠানে কলকারখানা পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণের প্রেক্ষাপট ও পদ্ধতি, খাতভিত্তিক অগ্রাধিকার তালিকা ও চেকলিস্টের ওপর তিনটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপিত হয়।
এফবিসিসিআই সেফটি কাউন্সিলের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শহীদুল্লার উপস্থাপিত কলকারখানা পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণের প্রেক্ষাপট ও পদ্ধতি পর্বে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে ২৪ সদস্যের জাতীয় কমিটি, বিডার নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি ও তিনটি উপ-কমিটি সম্পর্কে জানানো হয়।
বলা হয়, ৬৮ ধরনের শিল্পখাতকে অন্তর্ভুক্ত করে, দুর্ঘটনা ও ঝুঁকি বিবেচনায় ৩২টি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বিত পরিদর্শন কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে মোট ৪৬ হাজার ১০০টি কারখানাকে।
তবে প্রথম তিন মাসে ৫ হাজার কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে। পর্যবেক্ষণে যাওয়ার তিনদিন আগে সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে জানানো হবে।
দ্বিতীয় পর্বের উপস্থাপনায় অগ্রাধিকার তালিকার অন্তর্ভুক্ত শিল্প সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন সেফটি অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সভাপতি জনাব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আলি আহমেদ খান।
তৃতীয় পর্বে, পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমে কোন বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করা হবে, তার চেকলিস্ট সম্পর্কে অবহিত করেন আইওটা কনসাল্টিং বিডি’র ফাউন্ডার ও সিইও এবং সেফটি অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সদস্য মো. গোলাম কিবরিয়া।
মুক্ত আলোচনায় এফবিসিসিআই’র পরিচালকরা কারখানা পরিদর্শনের নামে অহেতুক হয়রানি না করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে নিরাপত্তা সামগ্রীর শুল্ক কাঠামো ও বাজার দর কমানোর সুপারিশ করেন।