ঢাকা (১৬ ডিসেম্বর) : জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. শাহনেওয়াজ শাহানশাহর হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মেহের উল্লাহ।
মেয়র সবার সামনেই তাকে চড় মারাসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে দেওয়ানগঞ্জ সরকারি হাই স্কুল মাঠে শহীদ মিনার বেদিতে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।
মেয়রের এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন, আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।এ ঘটনায় মেয়রের বিরুদ্ধে দেওয়ানগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন দেওয়ানগঞ্জ থানার ওসি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ভোরে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন দেওয়ানগঞ্জ সরকারি হাই স্কুল মাঠে বিজয় দিবস উদযাপনের নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। স্কুল মাঠের শহীদ মিনারের বেদিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সমবেত হন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের লোকজন।
আরও জানা গেছে, ওই অনুষ্ঠানে উপস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মেহের উল্লাহ। সকাল ৭টার দিকে তিনি উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনামতো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তালিকা থেকে মাইকে একে একে নাম ঘোষণা করেন। এ সময় দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শাহনেওয়াজ শাহানশাহ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যান।
মেয়র তার পৌর পরিষদের সবাইকে নিয়ে যথারীতি পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করে শহীদ মিনার থেকে নেমেই তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মেহের উল্লাহকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘…. বাচ্চা, পৌরসভা কি ৫ নম্বরে ফুল দিবে?’ একই সাথে মেয়র সজোরে মেহের উল্লাহর গালে দুইবার থাপ্পড় মারেন। এ নিয়ে সেখানে বেশ হট্টগোল শুরু হয়ে গেলে মেয়র শাহনেওয়াজ শাহনাশাহ দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মেহের উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে আমি উপজেলা প্রশাসনের দেওয়া তালিকা দেখেই সেখানে প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম ঘোষণা করছিলাম। সেই তালিকায় দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার নাম ৫ নম্বরে থাকা নিয়ে মেয়র আমার ওপর তেড়ে আসেন। আমাকে লক্ষ্য করে উপস্থিত সবার সামনেই মেয়র উচ্চৈঃস্বরে বলতে থাকেন ‘… বাচ্চা, পৌরসভা কি ৫ নম্বরে ফুল দিবে?’ এভাবে গালিগালাজ করতে করতে মেয়র আমার গালে সজোরে দুইবার থাপ্পড় মারেন। বিজয় দিবসের মতো মহান এই অনুষ্ঠানে সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় আমার সঙ্গে এ ধরনের আচরণে আমি খুবই বিপর্যস্ত এবং চরম অপমানিত হয়েছি। এ ঘটনার পরপরই আমি আমার ঊর্ধ্বতন বিভাগীয় কর্মকর্তাকে অবহিত করাসহ আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত এবং জনসমক্ষে বিনা কারণে অপমানিত করার জন্য মেয়রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা ও তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দেওয়ানগঞ্জের ইউএনওর কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছি।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ প্রসঙ্গে বেশ কয়েকবার ফোন করে দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শাহনেওয়াজ শাহানশাহকে পাওয়া যায়নি। খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শাহনেওয়াজ শাহানশাহ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝেও তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মেয়র শাহনেওয়াজ শাহানশাহ অত্যন্ত ঘৃণিত এবং ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুন্নাহার শেফা কালের কণ্ঠকে বলেন, আমি শহীদ মিনারের বেদিতেই ছিলাম। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে এ ধরনের অশালীন আচরণ করা হলে তারা কাজ করবে কিভাবে। মেয়র কাজটি ঠিক করেননি। এ ব্যাপারে ওই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসক স্যারকে জানিয়েছি।
দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মহব্বত কবির কালের কণ্ঠকে জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মেহের উল্লাহ থানায় অভিযোগ করেছেন। এ নিয়ে মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
মেয়রের এ ঘটনা প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মুর্শেদা জামান জানায় , আমি শুনেছি যে ওই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেওয়ানগঞ্জের ইউএনওর কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। ইউএনওকে বলব আমার কাছে প্রতিবেদন পাঠাতে। বিষয়টি আমি দেখব।