ঢাকা (২০ অক্টোবর) : কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে ইকবাল হোসেন (৩০) নামের একজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। কুমিল্লা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ প্রধান অপরাধী শনাক্ত করার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
গত কয়েকদিন ধরে ইকবালকে গ্রেপ্তারে তৎপর পুলিশ প্রশাসন। ইতোমধ্যে ইকবালের সহযোগী হিসেবে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পূজার আয়োজক এলাকাবাসী ও তদন্তকারী সংশ্লিষ্টরা জানান, ঘটনার আগের দিন গত ১৩ অক্টোবর (বুধবার) আড়াইটা পর্যন্ত মন্দিরে পূজাসংশ্লিষ্টদের উপস্থিতি ছিল। এরপর বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে দুজন নারী ভক্ত মণ্ডপে এসে হনুমানের মূর্তিতে প্রথম কোরআন শরিফটি দেখতে পান।
এ ঘটনার একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ গণমাধ্যম পেয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা যায়, কোরআন শরিফটি রাখার পর হনুমানের মূর্তির গদা কাঁধে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন প্রধান অভিযুক্ত ইকবাল। সময়টি রাত তখন সোয়া ৩টার মতো। রাত আড়াইটা থেকে ভোর সাড়ে ৬টার মধ্যে ওই ব্যক্তি কোরআন শরিফটি রেখে যান মণ্ডপে। ওই সময় হনুমানের হাতের গদাটি সরিয়ে নেন তিনি। গদা হাতে তার চলে যাওয়ার দৃশ্য ধরা পড়েছে ওই এলাকারই কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরায়।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্যে জানা গেছে, গদা কাঁধে নিয়ে হেঁটে যাওয়া ওই ব্যক্তির নাম ইকবাল হোসেন। তিনি কুমিল্লা নগরীর ১৭ নং ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর-লস্করপুকুর এলাকার নূর আহম্মদ আলমের ছেলে। নূর আলম পেশায় মাছ ব্যবসায়ী।
এ বিষয়ে ইকবালের মা আমেনা বেগম জানান, তার তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে ইকবাল সবার বড়। ইকবাল ১৫ বছর বয়স থেকেই নেশা করা শুরু করেন। ১০ বছর আগে তিনি জেলার বরুড়া উপজেলায় বিয়ে করেন। ওই ঘরে তার এক ছেলে রয়েছে। পাঁচ বছর আগে ইকবালের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তারপর ইকবাল চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়া বাজার এলাকার কাদৈর গ্রামে আরেকটি বিয়ে করেন। এই সংসারে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
আমেনা বেগম বলেন, ইকবাল নেশা করে পরিবারের সদস্যদের ওপর অত্যাচার করত। বিভিন্ন সময় রাস্তাঘাটেও নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ঘুরে বেড়াত। ইকবাল মাজারে মাজারে থাকতে ভালোবাসতেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সে বিভিন্ন সময় আখাউড়া মাজারে যেত। কুমিল্লার বিভিন্ন মাজারেও তার যাতায়াত ছিল।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের ওই মণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার পর সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ওই মণ্ডপের পাশাপাশি নগরীর আরও বেশ কিছু পূজামণ্ডপে হামলা চালানো হয়। পরে এই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে চাঁদপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়।