ভারী বৃষ্টি হলেই পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনা এখন প্রায় নিয়মিত হয়ে উঠেছে। চলতি বছর উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প ,কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও মহেশখালীতে পৃথক পাহাড় ধসে ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছে ১১ জন।
প্রতিবছরই এমন ঘটনা ঘটলে নেয়া হয় নানান উদ্যোগ। তবে সেই উদ্যোগ আলোর মুখ আর দেখেননা।
এরমধ্যে ২০০৭ ও ২০১৭ সালে ঘটে স্মরণ কালের সবচেয়ে ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনা। ২০০৭ সালের ১১ জুন পাহাড় ধসে চট্টগ্রামে মারা যায় ১২৭ জন মানুষ এবং ২০১৭ সালের ১২ ও ১৩ জুন রাঙামাটিসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৫ জেলায় পাহাড় ধসে ১৫৮ জন মারা যান।
২০০৭ ও ২০১৭ সালের পাহাড় ধসের ঘটনার পর পাহাড় ধসের কারণ অনুসন্ধান ও সমাধান খুঁজতে গঠিত হয় কারিগরি কমিটি। দুবারই এই কারিগরি কমিটির একজন সদস্য ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল এবং পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম। তিনি পাহাড় ধসের কারণ সম্পর্কে বলেন, ‘মূলত দুই কারণেই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে, প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট । পাহাড় ধসের প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, পাহাড়ের বালুময় মাটি ও অল্প সময়ে অধিক বৃষ্টি। এই অধিক বৃষ্টির কারণ কারণে প্রচুর পানি পাহাড়ের ফাটলে প্রবেশ করে মাটিকে নরম করে ফেলে। ফলে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে।’
মানব সৃষ্ট কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন,পাহাড়ে গাছ কাটা, পাথর সরানো, বসত বাড়ি তৈরি করতে পাহাড় কাটা, পাহাড়ের মাটি কাটার ফলে পাহাড়ের মাটি ভারি বৃষ্টি হলেই নরম হয়ে যায়। ফলে পাহাড়ে ধসের ঘটনা ঘটে।
পাহাড় ধস বন্ধ ও হতাহতের হাত থেকে রক্ষা পেতে কারিগরি কমিটি থেকে বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনাও দেয়া হয় বলে জানান ড. শহীদুল ইসলাম। প্রস্তাবনা গুলোর মধ্যে রয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে মানুষ সরিয়ে ফেলা, পাহাড় কাটা বন্ধ কারা, নতুন ভাবে গাছে লাগানো ও পাহাড়ে বসবাসরত মানুষ সরিয়ে ফেলা ও প্রতিটা পাহাড়ের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পাহাড় ম্যানেজমেন্ট কমিটি তৈরি করা এবং এর আওতায় পাহারের রক্ষণাবেক্ষণ করা।
পাহাড় ধসের কারণ অনুসন্ধান শেষে প্রস্তাবিত সমাধান গুলো কেন বাস্তবায়িত হচ্ছেনা, এই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোঃ কামরুল হাসান জানান, ‘ প্রস্তাবিত সমাধানগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু, নানান আইনি জটিলতার কারণে আটকে আছে। ‘
তবে, বর্তমানে পাহাড় ধস ও হতাহত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো ঠিক রাখা, পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষদের নিরাপদে রাখার জন্য কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।