আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর দিগন্ত জুড়ে কাশফুল জানান দিচ্ছে শারদীয় দুর্গা উৎসবের। প্রকৃতি যেন ছড়িয়ে দিচ্ছে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
প্রায় চারশো’ বছরের অধিক সময় নানান সংস্কৃতি ও স্থাপনার জন্য বিখ্যাত রাজধানী ঢাকা। এ শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পুরাণ ঢাকা। প্রতি উৎসবেই যেন নিজেকে জানান দেয় নতুন রূপে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিমাকে সাজানোর জন্যে শাড়ি-গহনা থেকে শুরু করে নানান ধরনের অলংকার বিক্রিতে জমে উঠেছে পুরান ঢাকার শাখারী বাজার। শেষ মুহূর্তের কেনা-কাটায় ব্যস্ত ক্রেতা-বিক্রেতা।
তবে বিক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। করোনাভাইরাসের কারণে এখনো অনেক ব্যবসায়ী ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। আবার অনেক বিক্রেতা বলেছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দুর্গা মায়ের শাড়ি গহনা থেকে শুরু করে প্রায় সব জিনিসের দাম বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন দুর্গা মায়ের শাড়ির দাম প্রতি গজে বেড়েছে প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। তাই তাদের ক্রেতাও কমেছে।
প্রতিমা সাজাতে অলংকারের কোনো বিকল্প নেই। সেই অলংকারের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বিক্রিও কমেছে
খিলক্ষেত সার্বজনীন সমাজ কল্যাণ সংঘ পূজা উদযাপন কমটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অবিনাশ সমাজপতি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সব জিনিসের দাম বেড়েছে। প্রতিমাকে সাজাতে গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি লাগছে। এভাবে সবকিছুর দাম বেড়েছে অপরদিকে পূজা উপলক্ষে অনুদানের পরিমাণও কমেছে।
পূজা উপলক্ষে দেশজুড়ে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। মাটির প্রলেপে শিল্পীর তুলির ছোঁয়ায় পূর্ণতা পাচ্ছে দেবী দুর্গার প্রতিমা।
দুর্গাপূজার প্রধান উপকরণ হচ্ছে মা দুর্গার প্রতিমা। এছাড়াও লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, অসুরসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি। দেবী দুর্গা ও তার বাহন সিংহের প্রতিমাসহ তৈরি করা হচ্ছে যাকে বধের জন্য দেবীর আগমন সেই মহিষাসুরের প্রতিমা।
মৃৎশিল্পীরা জানান, প্রতিবছর এই সময়ের জন্য আমরা অপেক্ষা করি। এটি শুধু আমাদের পেশা নয় আমাদের নেশাও। বাংলাবাজারের মৃৎশিল্পীরা জানান অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার প্রতিমা তৈরিতে খরচ বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশের বেশি। গত বছর সাইজ ভেদে দুর্গা মার একসেট প্রতিমা বানাতে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা হলে এবার তা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ টাকার উপরে।
এবারের দুর্গাপূজা আগামী ১ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজা দিয়ে শুরু করে ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমী দিয়ে শেষ হবে। করোনার ঘোর কাটিয়ে এবারের আমেজ যেন বাঁধনহীন। ঢাকার বিভিন্ন স্থানের পূজা উদযাপন কমিটিসহ অন্যান্য সংগঠনের নেই দম ফেলার অবকাশ। রাত জেগেও কাজ করছেন অনেক শিল্পীরা। নিজেদের সর্বোচ্চ কারিগরি দক্ষতা দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন বাহারী কারুকাজ।