নভেম্বর ২১, ২০২৪ ১:২৭ পূর্বাহ্ণ

ইউক্রেন কি রাশিয়াকে পরাজিত করছে?

রাশিয়া কি ইউক্রেনে পরাজিত হচ্ছে?
রাশিয়া কি ইউক্রেনে পরাজিত হচ্ছে?

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ছয় মাসেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। এর মধ্যে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিস্তৃত এলাকা দখল করে নিয়েছে। তবে, ইউক্রেন সম্প্রতি সেসব অঞ্চলের কিছু কিছু জায়গা পুনর্দখল করেছে।

ইউক্রেনীয় সৈন্যদের প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে রুশ সৈন্যরা পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান শহরগুলো থেকে পিছু হটে যাচ্ছে। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী দাবি করেছে সেপ্টেম্বরের শুরুতে পাল্টা আক্রমণ শুরু করার পর রাশিয়ার কাছ থেকে ৩ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা মুক্ত করেছে।

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শনিবার সৈন্যরা কুপিয়ানস্কে প্রবেশ করেছে, রুশ বাহিনীর জন্য পূর্বাঞ্চলে যা একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ কেন্দ্র। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে যে তাদের সৈন্যরা পুনঃসংগঠিত হতে ইজিউম থেকে পিছু হটেছে।

দোনেৎস্কে প্রচেষ্টা জোরদার করার জন্য তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর বালাকলিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মন্ত্রণালয়।

এপ্রিল মাসে কিয়েভের আশেপাশের এলাকা থেকে রাশিয়া সেনা প্রত্যাহার করার পর থেকে ইউক্রেনের এই অগ্রগতি এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ।

ইজিউম থেকে রাশিয়ার প্রত্যাহারের বিষয়টি স্বীকার করে নেয়া বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এটি মস্কোর জন্য একটি প্রধান সামরিক কেন্দ্র ছিল।

এই পরিস্থিতিতে মস্কোর তরফে ‘পিছু হঠার ব্যাখ্যাও’ মিলেছে সোমবার। কিছু রুশ সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, পুতিনের নির্দেশে ডনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ মজবুত করতে ইউক্রেনের অন্য অঞ্চলগুলি থেকে সেনা সরিয়ে আনা হচ্ছে সেখানে।

শনিবার রাতের ভিডিও ভাষণে, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছেন যে, ইউক্রেন এই মাসের শুরুতে পাল্টা আক্রমণ শুরু করার পর থেকে রাশিয়ার কাছ থেকে ২ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা মুক্ত করা হয়েছে।

তার দাবি অনুযায়ী মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এর অর্ধেক পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মি. জেলেনস্কি এর দ্বিগুণ এলাকা মুক্ত করার কথা জানিয়েছেন।

প্রত্যাশার তুলনায় কম সময়ে খারকিভ দখলমুক্ত করেছেন ইউক্রেনের সেনারা। সেখানকার ৩০টির বেশি শহর ও গ্রাম থেকে রুশ সেনাদের হটিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। এসব খবরে বলা হয়েছে, ন্যূনতম প্রতিরোধ ছাড়াই পিছু হটেছে রুশ বাহিনী। অনেক জায়গায় গোলাবারুদ, সামরিক সরঞ্জাম, সাঁজোয়া যান রেখে পালিয়েছে তারা।

 

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ছয় মাসেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। এর মধ্যে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিস্তৃত এলাকা দখল করে নিয়েছে। তবে, ইউক্রেন সম্প্রতি সেসব অঞ্চলের কিছু কিছু জায়গা পুনর্দখল করেছে।

 

 

খারকিভ দখলমুক্ত করাকে ইউক্রেনের বাহিনীর ‘বড় অর্জন’বলছেন জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব ব্রেমেনের রাশিয়াবিষয়ক বিশ্লেষক নিকোলাই মাইত্রোখিন। তিনি বলেন, ‘মাত্র চার দিনে ইউক্রেনের সেনারা রাশিয়ার চার মাসের সফলতাকে বাতিল করে দিয়েছেন। খারকিভে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে রুশ বাহিনী।

খারকিভের নিয়ন্ত্রণ হারানোর মধ্য দিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ সেনাবাহিনীর দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (সিআইএ) প্রধান উইলিয়াম বার্নস। ওয়াশিংটনে এক সম্মেলনে বার্নস বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে পুতিন যখন হামলার সিদ্ধান্ত নেন, তখন তিনি ইউক্রেনীয়দের সংকল্পকে অবমূল্যায়ন করেছিলেন। এখন কিয়েভের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনের ব্যাপারেও একই ভুল করছেন তিনি। এর ফলে দীর্ঘ মেয়াদে রাশিয়ার অর্থনীতি ও রুশ প্রজন্ম ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

খারকিভ ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। অঞ্চলটি রাশিয়ার সীমান্তবর্তী। ওই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ দুই শহর ইজিয়াম ও কুপিয়ানস্ক পুনর্দখল ইউক্রেন বাহিনীর জন্য কৌশলগতভাবে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ দুই শহরে খারকিভ অঞ্চলের প্রশাসনিক দপ্তর গড়ে তুলেছিল রাশিয়া। সেনাদের রসদ যেত শহর দুটি থেকে। তাই অঞ্চলটি থেকে রুশ সেনাদের হটিয়ে দেওয়ার ঘটনা চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে।

চলমান যুদ্ধে ইজিয়াম শহরে হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। রুশ হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে শহরটির ৮০ শতাংশে বেশি অবকাঠামো। এখন রুশ সেনাদের হটিয়ে দেওয়ার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দখলদার বাহিনীর অপকর্মের বিষয়ে জানাতে শহরটির মানুষকে অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেছেন, রুশ সেনাদের অপরাধের বিচার করা হবে।

খারকিভ অঞ্চলে নিয়োজিত রাশিয়ার শীর্ষ কর্মকর্তা ভিতালি গনচেভ জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে ইউক্রেন বাহিনী যে হামলা শুরু করে, সেখানে রুশ সেনাদের তুলনায় তাদের বহর ছিল অনেক বড়। একজন রুশ সেনার বিপরীতে ইউক্রেনের সেনার সংখ্যা দাঁড়ায় আটজনে। তাঁরা খারকিভের উত্তরাঞ্চলের বসতিগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। ইউক্রেনের সেনারা রাশিয়ার বেলগোরোদ সীমান্তের দিকে এগিয়ে আসছেন। রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত রোসিয়া–২৪ টেলিভিশন চ্যানেলকে ভিতালি গনচেভ বলেন, ‘প্রতি ঘণ্টাতেই পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে।’ওই এলাকা থেকে পাঁচ হাজার বেসামরিক লোককে উদ্ধার করে রাশিয়ায় আনা হয়েছে।

রুশ সেনাদের এভাবে বেকায়দায় পড়ার পেছনে দেশটির সেনার সংখ্যায় ঘাটতির কথা বলেছে ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে গতকাল বলা হয়, এ যুদ্ধ সম্ভবত সামনের বছরে গড়াবে। তবে ইউক্রেন বাহিনী যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ তাদের অনুকূলে এখনো ধরে রাখতে পেরেছে। পশ্চিমাদের দেওয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা হাইমোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেমের (হিমার্স) মতো আধুনিক সমরাস্ত্রের সদ্ব্যবহার এবং কার্যকর যুদ্ধকৌশলের কারণে তারা এটা সম্ভব করতে পেরেছে।

তবে যুদ্ধে সাময়িক পিছু হটলেও ইউক্রেনে লক্ষ্য অর্জনে অবিচল থাকার কথা জানিয়েছে মস্কো। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং যতক্ষণ না পর্যন্ত আমাদের লক্ষ্য অর্জন হবে, ততক্ষণ তা চলতে থাকবে।

অবশ্য রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, ইউক্রেন নিয়ে সমঝোতার বিপক্ষে নয় রাশিয়া। তবে এ জন্য তারা যত বেশি সময় নেবে, তাতে কোনো বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছানো তত বেশি কঠিন হবে।

সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দৃশ্যত ইউক্রেনের অগ্রাভিযানে গতি সঞ্চার হয়েছে এবং এসবই সম্ভব হচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে কিয়েভকে অত্যাধুনিক সব অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামাদি দেওয়ার কারণে।

ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর এই সামরিক সহায়তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের বৃহত্তম এই যুদ্ধে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনকে সাহায্য করছে।

 

 

 

 

 

 

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Email
Print

সম্পর্কিত

লস এঞ্জেলসে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত লেখক ইসমাইল হোসেন

ঢাকা(২৩ নভেম্বর): গত ১৮ই নভেম্বর লস এন্জলসে লেখক সংগঠক ইসমাইল হোসেনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।দুর দুরান্ত থেকে আসা বাঙালীদের ফুলেল শুভেচ্ছায়...

বিশ্ববাজারে পাম অয়েলের দাম কমলেও দেশীয় বাজারে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি

বিশ্ববাজারে পাম অয়েলের দাম কমলেও দেশীয় বাজারে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি

বিশ্ববাজারে রেকর্ড পরিমাণ দাম কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পাম অয়েল উৎপাদানকারী দেশ মালয়েশিয়াতে বর্তমানে প্রতি টন পাম...