ঢাকা (৩০ অক্টোবর ) : ১৫ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে প্রতি ডলারের দাম বেড়েছে ২ টাকার বেশি। এর ফলে মার্কিন ডলারের দাম বৃহস্পতিবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৪০ পয়সা।
ডলারের এই তেজিভাবের ধাক্কায় টাকার বিপরীতে বিদেশি প্রধান মুদ্রাগুলোর বিনিময় হারও বেড়ে গেছে। কারণ, রাজধানীর বাজারে এসব বিদেশি মুদ্রারও সংকট দেখা দেয়। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে খোলাবাজার ও মানি চেঞ্জারদের কাছে বিশেষ করে ব্রিটিশ পাউন্ড পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। তবে খোলাবাজারের মতো ব্যাংকিং চ্যানেলে বিদেশি মুদ্রার কেনাবেচা ততটা অস্থির নয়। আবার একেবারে স্থির হয়ে আছে, বিষয়টি তেমনও না। ব্যাংকিং চ্যানেলেও ধীরে ধীরে ডলারসহ বিভিন্ন বিদেশি মুদ্রার দাম বাড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খোলাবাজারে এখন যেসব বিদেশি মুদ্রার চাহিদা বেশি, তার শীর্ষে রয়েছে ভারতীয় রুপি। অন্য প্রধান মুদ্রাগুলোর মধ্যে মার্কিন ডলার, ইউরো, ব্রিটিশ পাউন্ড, সৌদি রিয়াল, থাইল্যান্ডের বাথ, দুবাইয়ের দিরহাম, কানাডিয়ান ও সিঙ্গাপুর ডলার—এগুলোর চাহিদা বেশি। এর মধ্যে ভারতীয় রুপি বিভিন্ন সীমান্তবর্তী জেলা ও বিভাগীয় শহরে পাওয়া যায়। আর অন্য সব মুদ্রার জন্য সবার নির্ভরের জায়গা হলো রাজধানী ঢাকা।
গত বুধবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিল ও গুলশানের বিভিন্ন মানি চেঞ্জারের কর্মী ও খোলাবাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদেশি মুদ্রা কেনার জন্য যে চাহিদা রয়েছে, সেভাবে সরবরাহ নেই। যাঁরা বিদেশি মুদ্রা সংগ্রহে রেখেছিলেন, তাঁরা এখন বিক্রি করছেন। আর অল্প কিছু বিদেশফেরত ব্যক্তি মুদ্রা বিক্রি করতে আসছেন। দুই ধরনের বিক্রেতারাই দাম বেশি চাইছেন। ফলে দাম বেড়ে গেছে।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় দেড় বছর বিভিন্ন দেশে প্রবেশে একরকম নিষেধাজ্ঞা ছিল। বন্ধ ছিল পর্যটননির্ভর দেশগুলোর সীমান্তও। এর ফলে অনেক দেশের পাশাপাশি বহুজাতিক বিমান সংস্থাগুলোও আর্থিক সংকটে পড়ে। এখন ধীরে ধীরে দেশগুলো খুলতে শুরু করেছে।
পর্যটকদের করোনার টিকা নেওয়া থাকলেই কোনো কোনো দেশ প্রবেশে না করছে না। অবশ্য ভ্রমণের সময় পরীক্ষার মাধ্যমে করোনায় আক্রান্ত না হওয়ার প্রমাণপত্র দিতে হচ্ছে। ফলে অনেক রুট তথা গন্তব্যে বহুজাতিক বিমান সংস্থাগুলো আবার তাদের উড্ডয়ন কার্যক্রম শুরু করেছে। তাই মানুষজনও এখন পেশাগত কাজ, শিক্ষা, চিকিৎসা ও কেনাকাটার জন্য বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করছেন। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের মুদ্রাবাজারে।
খোলাবাজারের মুদ্রা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাইরে যাওয়ার জন্য হঠাৎ ডলারের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। সে তুলনায় হাতে হাতে দেশে ডলার আসছে না। ফলে দাম বেড়ে গেছে। হাতে হাতে ডলার দেশে না এলে দামের ঊর্ধ্বগতি শিগগির থামবে না।
বিভিন্ন মানি চেঞ্জারের কর্মীরা জানান, ১৫ দিন আগেও প্রতি ডলার ৮৮ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এখন যা বেড়ে ৯০ টাকার বেশি হয়েছে। শুধু ডলার নয়, তখন প্রতি পাউন্ডের দাম ছিল ১২২ টাকা, যা গতকাল বেড়ে হয়েছে ১২৮ টাকা।
তবে গ্রাহকেরা চাইলে পাসপোর্টে এনডোর্স করে ব্যাংক থেকেও ডলার কিনতে পারেন। ব্যাংকগুলো এখন ৮৮ টাকায় ডলার বিক্রি করছে। তবে ঋণপত্রের দেনা পরিশোধে ব্যবসায়ীরা প্রতি ডলার পাচ্ছেন ৮৫ টাকা ৬৫ পয়সায়। ফলে খোলাবাজারের সঙ্গে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দামের পার্থক্য ৪ টাকার বেশি হয়ে গেছে, যা সাধারণত ২-৩ টাকার মধ্যে থাকে।
এদিকে দেশে আমদানি খরচের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে করোনার টিকা। ফলে তিন মাস ধরে বাড়ছে টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম। অর্থাৎ দিনে দিনে দুর্বল হচ্ছে বাংলাদেশি টাকা। ফলে পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এর প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের ওপর।
এদিকে করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর মানি চেঞ্জার ও খোলাবাজারের ব্যবসায়ীদের কোনো ব্যবসা ছিল না। এত দিন পর ব্যবসা চালু হলেও বিদেশি মুদ্রার সংকটের কারণে ব্যবসায় জমছে না বলে তাঁরা জানান।
জানতে চাইলে গুলশানের ডিসিসি মার্কেটের ঢাকা মানি এক্সচেঞ্জের কর্ণধার মশিউর রহমান বলেন, প্রায় দেড় বছর বসে ছিলাম। অনেক দিন তো মানি চেঞ্জার বন্ধ ছিল। এখন খুলেছে, কিন্তু বাজার চড়া। ১৫ দিনে ডলার ও পাউন্ডের দাম অনেক বেড়ে গেছে। অন্য মুদ্রাগুলোর দামও ধীরে ধীরে বাড়ছে। মানুষ যেভাবে চাইছেন, সেভাবে সরবরাহ নেই।
ওই মার্কেটেই গতকাল ডলার কিনতে এসেছিলেন ইশরাক হোসেন নামের একজন বলেন, ‘প্রতি ডলার কিনতে ৯০ টাকা ৩০ পয়সা খরচ হলো। করোনার আগে যখন আমেরিকা যাই, তখন ডলার কিনেছিলাম ৮৫ টাকায়।’
মতিঝিলের ডলার ব্যবসায়ী রাজিউল ইসলাম বলেন, পাউন্ড পাওয়া যাচ্ছে না। অন্য মুদ্রাগুলোরও সংকট আছে। ফলে সব মুদ্রার দাম বাড়ছে।