ঢাকা (১৭ নভেম্বর) : কয়েকদিন ধরে শুনেছি যে তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমার একটা প্রবণতা দেখা দিয়েছে। যদি কমতে থাকে তাহলে নতুন দাম অনুসারে আবার নতুন করে দাম নির্ধারণ করবো। কিন্তু সেটার প্রভাব পড়তে একটু সময় লাগবে। বিশ্ববাজারে দাম কমলে আমাদের দেশেও কমবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।।
আজ বুধবার বিকালে সচিবালয়ে নবনিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ওপর থেকে আপাতত তিন-চার মাসের জন্য ভ্যাট কমালে সুবিধা হতো উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের অধীনে যে কটি পণ্য আছে যেমন- তেল, চিনি, পেঁয়াজ ও ডাল এগুলো সবই আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনতে হয়। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে আনতে যে দাম পড়ে তার ওপর পর্যালোচনা করে আমরা একটা দাম নির্ধারণ করি। আন্তর্জাতিক বাজারে যদি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম না কমে তাহলে আমরা কমাবো কেমন করে? সার্বিকভাবে তো কমানো যায় না। তবে আমরা যেটা পারি সেটা হলো টিসিবির মাধ্যমে তৃণমূল মানুষকে ন্যায্যমূল্যে দিতে পারি।
তিনি বলেন, দাম কমানোর এক মাত্র উপায় হলো আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, চিনি ও ডালের দাম কমলে আমাদের দেশে কমানো সম্ভব। এর বাইরে যে অন্যান্য পণ্য রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে আমার ধারণা সীমিত। তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমলে আমরাও কমিয়ে দেবো
ভ্যাট কমানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দিয়েছিলেন সেটার খবর কী, জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, পেঁয়াজ ও চিনির ওপর থেকে ভ্যাট কমিয়েছে সরকার। তেলে এখনো কমেনি। তেলে অন্য কোনোকিছু নাই ভ্যাট ও ট্যাক্স ছিল সেটার জন্যও বলেছি। দেখা যাক যদি কমায় তাহলে একটু সুবিধা হতো, সাধারণ মানুষের সাশ্রয় হবে। তবে সরকারের রাজস্বও দরকার আছে। কোথাও তো ব্যালেন্স করতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ওপর থেকে আপাতত তিন/চার মাসের জন্য ভ্যাট কমালে আমাদের জন্য সুবিধা হতো। তারপরও দেখা যাক কী করে।
পেঁয়াজের দাম নিয়ে তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম এখন এতো বেশি নেই, যেটা বেড়েছিল। এক-দেড় মাসের মাথায় আরও কমে আবার ৪০ টাকায় চলে আসবে। বর্তমানে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আমাদের আমদানি যদি ঠিক থাকে ও ভারত যদি বন্ধ না করে তাহলে মূল্যবৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। আর মুড়িকাটা পেঁয়াজও আগামী মাসে উঠবে। তাই পেঁয়াজ নিয়ে তেমন কোনো চিন্তা করছি না যদি অন্যকোনো সমস্যা না হয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি সৌজন্যে সাক্ষাৎ করতে এসেছে। তার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আগামীতে আমরা একসঙ্গে কাজ করবো। বাণিজ্য সংক্রান্ত নির্দিষ্ট কোনো কিছু নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে জিএসপি ও জিএসপি প্লাসসহ বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রয়োজন হলে সামনে আরও আলোচনা করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা জিএসপি ও জিএসপি প্লাস নিয়ে বলেছি। এ বিষয়ে ইউরোপের অন্যান্য দেশসহ যারা আছে তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে তারা রাজি। এছাড়া জিএসপি প্লাস আমরা ২০২৯ সাল পর্যন্ত পাবো বলে আশা করছি। তবে আমাদের প্রত্যাশা আরেকটু বেশি। এ বিষয়ে গভীর কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা শুধু জানিয়েছি, আমাদের আরও দরকার। তিনি বলেছেন, আলোচনা করা যেতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি বলেছেন, জিএসপি প্লাস খুব একটা সহজ হবে না সে বিষয়ে আপনার মতামত কী, এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আজ জিএসপি প্লাসের বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। তবে সহজ নাও হতে পারে। তিনি বলেছেন, তোমরা আলোচনা করতে পারো। কিন্তু আজ তিনি পজিটিভই বলেছেন। সব দেশের সাপোর্ট দরকার আলোচনা করতে হবে তোমাদের। ইউরোপের ২৭টি দেশের সাথে এককভাবে আমাদের যোগাযোগ করতে হবে।
২০২৪ থেকে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত নতুন করে জিএসপি প্লাস চালু হতে যাচ্ছে, সেখানে বলা হয়েছে কোনো দেশই ৬ শতাংশের বেশি পণ্য রপ্তানি করতে পারবে না। এ বিষয়ে সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি বলেন, ৬ শতাংশের বেশি কোনো সিঙ্গেল পণ্যের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করবো। এক্ষেত্রে আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। আমরা সব দিক থেকে চেষ্টা করবো। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় বাজার।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন কি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায় এমন প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়। তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো জানে।
আমরা উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশের দিকে যাচ্ছি সেখানে আমাদের কতটুকু প্রস্তুতি আছে এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের যেমন চ্যালেঞ্জ আছে, পাশাপাশি কিছু সমস্যাও আছে। যখন হবে তখন ডিউটি কাঠামোতে পরিবর্তন আসবে, রাজস্ব আয় বাড়বে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী ১০০ বছরের প্ল্যান করে রেখেছেন। আমরা চেষ্টা করবো এ চ্যালেঞ্জগুলোর বাইরে গিয়ে পিটিএ, এফটিএ করতে। আমরা দীর্ঘ দৌড়ের জন্য প্রস্তুত আছি। যেকোনো ধরনের সমস্যা মোকাবিলার জন্য আমরা প্রস্তুত।